
তাসফিয়া জান্নাহ তুবা
বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগীর সময়, অর্থ, আর ধৈর্যের কোনো মূল্য নেই- তা সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি। ডাক্তারদের চেম্বারে গিয়ে প্রায়ই দেখা যায় ‘সিরিয়াল’ নামের বিষয়টি কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ। সময়মতো উপস্থিত হয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় অনেক রোগীকে, কারণ ‘রেফারেন্স’ থাকা রোগীরা আগে সুযোগ পান। তাদের জন্য কখনো কখনো বিশেষ আতিথেয়তা, চা-নাস্তা পরিবেশন; যেন চিকিৎসার অংশ হিসেবেই ধরা হয়।
আর এ দৃশ্য নীরবে দেখতে হয় দূর-দূরান্ত থেকে আসা অসহায় রোগীদের, যারা কষ্ট করে টাকা, সময়, আর শক্তি ব্যয় করে শুধুমাত্র ন্যায্য চিকিৎসা পাওয়ার আশায় আসেন। অথচ এই মৌলিক অধিকারটুকুই তাদের নাগালের বাইরে।
ডাক্তার ও সহকারীদের উদাসীনতা, অযৌক্তিক প্রাধান্য, অহংকারী ব্যবহার- সব মিলিয়ে রোগীর অধিকার বারবার পদদলিত হচ্ছে। কয়েক মিনিটের তড়িঘড়ি আলাপ, কোনো স্পষ্ট চিকিৎসা-পরামর্শ ছাড়া শুধু অতিরিক্ত টেস্টের চাপ আর এর জন্য ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা ফি।পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ফলো-আপে আবার অতিরিক্ত ২০০/৫০০/৭০০ টাকা ফি দিতে হয়- যা কোন আইনের ভিত্তিতে নেওয়া হয়, তা স্পষ্ট নয়। দরিদ্র রোগীদের জন্য কোথাও কমিশন বা ছাড়ের ব্যবস্থাও নেই।
অনেক ডাক্তার একই দিনে ৩-৪টি চেম্বার করেন, সময়মতো আসেন না, রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন। রাত ১টা-২টা পর্যন্ত রোগী দেখার পর, বিশেষ করে সার্জনরা, রাত ২টা-৩টা পর্যন্ত অপারেশন করেন- ফলে শারীরিক ক্লান্তি থেকে ভুলের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আমরা টাকা দিচ্ছি চিকিৎসার জন্য, নাকি অসম্মান আর অবহেলার জন্য?
দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা আমাদের অন্যতম মৌলিক চাহিদা- স্বাস্থ্যসেবা টাকা দেওয়ার পরও পাই না। এটি শুধু অবিচার নয়, বরং মৌলিক মানবাধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন। সরকারি বা বেসরকারি, যেখানেই যাই না কেন, রোগীর সম্মান ও প্রাপ্য সেবা এখন বিলাসিতা হয়ে গেছে। এই ভঙ্গুর, দুর্নীতিগ্রস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা বদলানো জরুরি-এখনই।
লেখক : শিক্ষার্থী
এইচএসসি, ২য় বর্ষ
সরকারি মহিলা কলেজ, বরিশাল।
(মতামত লেখকের নিজস্ব।)




